প্রস্টেট ক্যান্সার হলো পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সারের একটি ধরনের, যা প্রস্টেট গ্রন্থিতে তৈরি হয়। প্রস্টেট গ্রন্থি হলো একটি ছোট গ্রন্থি, যা পুরুষের মূত্রথলির নিচে এবং মূত্রনালির চারপাশে অবস্থিত। এটি বীর্যের একটি অংশ তৈরি করে, যা শুক্রাণুর জন্য পরিবহন মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। প্রস্টেট ক্যান্সার সাধারণত ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।
প্রস্টেট ক্যান্সারের কারণ ও ঝুঁকি
প্রস্টেট ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কারণ এখনও পরিষ্কার নয়, তবে কিছু ঝুঁকি ফ্যাক্টর রয়েছে যা এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়:
1. বয়স:** ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের মধ্যে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।
2. পরিবারের ইতিহাস:রিবারের কোনো সদস্যের প্রস্টেট ক্যান্সার থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
3. জাতিগত প্রবণতা:আফ্রিকান-আমেরিকান পুরুষদের মধ্যে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।
4. হরমোন:উচ্চ টেসটোস্টেরনের মাত্রা প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
5. ডায়েট:উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার এবং কম ফল ও সবজি খাওয়া প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
প্রস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায়ে প্রস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণগুলো খুবই অস্পষ্ট হতে পারে। তবে ক্যান্সার বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে:
- মূত্রত্যাগের সময় অসুবিধা বা ব্যথা
- মূত্র প্রবাহ দুর্বল হওয়া
- রক্তমিশ্রিত মূত্র বা বীর্য
- মূত্রনালিতে বারবার সংক্রমণ
- পেলভিস বা পিঠে ব্যথা (ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে)
প্রস্টেট ক্যান্সারের নির্ণয়
প্রস্টেট ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়:
- PSA (Prostate-Specific Antigen) টেস্ট:এটি একটি রক্ত পরীক্ষা যা প্রস্টেটের সমস্যা সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
- ডিজিটাল রেক্টাল এক্সাম (DRE):ডাক্তার প্রস্টেট গ্রন্থির আকার এবং অবস্থান পরীক্ষা করেন ।
- বায়োপসি: প্রস্টেট থেকে টিস্যু নমুনা নিয়ে পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়।
প্রস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসা
প্রস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সারের ধাপ, রোগীর বয়স, স্বাস্থ্যের অবস্থা, এবং ক্যান্সার কতটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে তার উপর। কিছু সাধারণ চিকিৎসার পদ্ধতি হলো:
1. সক্রিয় পর্যবেক্ষণ (Active Surveillance): যদি ক্যান্সার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং তেমন সমস্যা সৃষ্টি না করে, তাহলে ডাক্তার ক্যান্সারের বৃদ্ধির উপর নজর রাখবেন এবং প্রয়োজনীয় হলে পরবর্তীতে চিকিৎসা শুরু করবেন।
2. শল্যচিকিৎসা (Surgery):প্রস্টেটেক্টমি নামে পরিচিত এই পদ্ধতিতে পুরো প্রস্টেট গ্রন্থি সরিয়ে দেওয়া হয়। এটি তখন করা হয় যখন ক্যান্সার শুধুমাত্র প্রস্টেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
3. রেডিয়েশন থেরাপি (Radiation Therapy):রেডিয়েশন ব্যবহার করে ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করা হয়। এটি শল্যচিকিৎসার বিকল্প হিসেবে বা শল্যচিকিৎসার পরেও করা হতে পারে।
4. হরমোন থেরাপি (Hormone Therapy): টেসটোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি ধীর করা হয়। এটি তখন ব্যবহার করা হয় যখন ক্যান্সার প্রস্টেটের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে।
5. কেমোথেরাপি (Chemotherapy): কেমোথেরাপি ঔষধের মাধ্যমে ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করা হয়। এটি সাধারণত সেইসব রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হয় যাদের ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে এবং অন্য থেরাপি কাজ করছে না।
6. ইমিউন থেরাপি (Immunotherapy): শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করা হয়। এটি তখন ব্যবহার করা হয় যখন ক্যান্সার উন্নত অবস্থায় থাকে।
প্রতিরোধ
প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য কোনো নির্দিষ্ট উপায় নেই, তবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ঝুঁকি কমানো যেতে পারে:
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা
- নিয়মিত ব্যায়াম করা
- সঠিক ওজন বজায় রাখা
- নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা করানো
উপসংহার
প্রস্টেট ক্যান্সার সাধারণত ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা গেলে সফলভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব। চিকিৎসার জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ এবং নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা প্রস্টেট ক্যান্সার নির্ণয়ে সহায়ক হতে পারে।
0 মন্তব্যসমূহ